হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV) কী?
হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV) এমন একটি ভাইরাস যা মানুষের ত্বক ও মিউকাস মেমব্রেন সংক্রমণ করতে পারে। এটি ২০০টিরও বেশি প্রকারের মধ্যে বিভক্ত। কিছু ধরন সম্পূর্ণ নির্দোষ হলেও অন্যগুলো ক্যান্সারসহ জটিল রোগের কারণ হতে পারে। HPV মূলত যৌন সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায় এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে সাধারণ যৌনবাহিত সংক্রমণ।
HPV এর প্রকারভেদ:
HPV সাধারণত দুই ভাগে বিভক্ত:
- লো-রিস্ক HPV: এই ধরণটি সাধারণত জেনিটাল ওয়ার্টস সৃষ্টি করে এবং ক্যান্সারের কারণ হয় না।
- হাই-রিস্ক HPV: এই ধরণটি জরায়ু, পায়ুপথ, গলা ও গলার অংশে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
লক্ষণসমূহ:
- জেনিটাল ওয়ার্টস (ছোট ছোট গুটি যা নরম বা শক্ত হতে পারে)।
- মুখ, গলা বা গলার অংশে গুটি বা প্রদাহ।
- জরায়ু বা পায়ুপথে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি, যা ক্যান্সারের সূচনা হতে পারে।
- গলা এবং মুখের সংক্রমণের ক্ষেত্রে গিলতে সমস্যা।
কীভাবে সংক্রমিত হয়?
HPV ভাইরাস সাধারণত নিম্নলিখিত উপায়ে ছড়ায়:
- যৌন মিলন: যেকোনো ধরনের যৌন সম্পর্ক, এমনকি সুরক্ষিত যৌনমিলনের মাধ্যমেও।
- ত্বকের সংস্পর্শ: সংক্রমিত ব্যক্তির ত্বকের সংস্পর্শে আসা।
- মাতৃগর্ভ: প্রসবের সময় মায়ের থেকে নবজাতকের শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে।
উপায়:
- HPV টিকা:
- গার্ডাসিল এবং সারভারিক্স নামে দুটি ভ্যাকসিন বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত।
- এই টিকা ৯-২৬ বছর বয়সীদের জন্য বেশি কার্যকর।
- সুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক:
- যৌনমিলনের সময় কনডম ব্যবহার করুন।
- স্বাস্থ্য সচেতনতা:
- নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করুন এবং প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট করান।
- ধূমপান ত্যাগ:
- ধূমপান HPV সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
চিকিৎসা পদ্ধতি:
HPV সংক্রমণের নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তবে লক্ষণ ও জটিলতার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
- ওয়ার্টস অপসারণ:
- ওষুধ, ক্রায়োথেরাপি, বা লেজার সার্জারি।
- অ্যাবনরমাল কোষ অপসারণ:
- ক্যান্সার প্রতিরোধে কোলপোসকোপি বা লুপ ইলেক্ট্রো সার্জিকাল প্রসিডিউর (LEEP)।
- ক্যান্সার চিকিৎসা:
- কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি বা সার্জারি।
HPV এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি:
বিশেষত হাই-রিস্ক HPV এর কারণে জরায়ু, পায়ুপথ, মুখগহ্বর এবং গলার ক্যান্সার হতে পারে।
- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সময়মতো টিকা গ্রহণ করুন।
- যৌন সঙ্গীর সংখ্যা সীমিত রাখুন এবং সুরক্ষিত যৌন অভ্যাস গড়ে তুলুন।
HPV সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করুন:
HPV নিয়ে ভয় বা লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। এটি সচেতনতা ও সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং টিকাদান নিশ্চিত করুন।